প্রকাশিত: ১৮/০৭/২০১৬ ৬:০৭ পিএম , আপডেট: ১৮/০৭/২০১৬ ৬:০৯ পিএম

আবু আহম্মেদ আল মামুন ::

সাফল্য সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রসারই বলে দেয় যে, বাংলাদেশ বিস্ময়কর সাফল্যের গল্পে পরিণত হতে চলেছে। অমিত সম্ভাবনাময় দেশ নিজের সাফল্যের জন্য গর্ব করতে শুরু করেছে। বিশ্বের সবাই পারে, আর আমরা পারবো না, আমাদের দিয়ে হবেনা-তা তো আর সত্য নয়। এখন লাল-সবুজের পতাকাকে বিশ্ব আরও বেশি চিনতে শুরু করেছে। আজ বাংলাদেশ একটি অনুসরণীয় উন্নয়নের মডেলে রূপান্তরিত হয়েছে।

অব্যাহত উন্নয়নের ধারাকে বাঁধাগ্রস্ত করতে একটি বিশেষ মহল ইসলামের নামে সন্ত্রাস করছে, তারা ধর্মের ভুল বাখ্যা করে সরলমনা ও শান্তিপ্রিয় জনগণকে ধোঁকা দিচ্ছে, তাদের সাথে প্রতারণা করছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম, অথচ তারা আল্লাহ-রাসুলের বাণীর মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে জিহাদের নামে চরমপন্থা, জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসের বীজ বপন করছে। দেশকে অস্থিতিশীল করতে মুক্তমনা লেখক, কবি, ব্লগারদের উপর হামলা করছে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনির সদস্যদের মনোবল ভেঙ্গে দিতে তাদের উপরও পরিকল্পিত হামলা করছে, হত্যাও করছে। যারা ধর্মের সংকীর্ণ ধারণা বা অপব্যাখ্যা দিয়ে জিহাদের নামে সন্ত্রাস ও হত্যা কাণ্ডের মাধ্যমে মানবতাকে বিপন্ন করছে, দেশের সুনাম বিনষ্ট করছে, তারা কোন ধর্মের অনুসারী নয়। কোন ধর্মেই চরমপন্থা বা সন্ত্রাসের স্থান নেই।

প্রিয় বাবা-মা,
আমরা দেশকে ভালোবাসি, সবাই চাই দেশের উন্নয়ন। আর দেশকে যারা ভালো বাসেনা, দেশের যারা উন্নয়ন চায়না, দেশের স্বাধীনতায় যারা বিশ্বাস করেনা, দেশে সাম্প্রদায়িক বিষ বাস্প যারা ছড়িয়ে দেয়, তারা দেশের শত্রু। এদের বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, এদের সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। আর এমনও হতে পারে আপনার কোন অবোধ সন্তান চরমপন্থা বা জঙ্গিবাদের খপ্পরে পড়ে সম্ভাবনাময় জীবনকে নষ্ট করবে এবং পরিবারে অশান্তি ডেকে আনবে। সম্প্রতি গুলশান ও শোলাকিয়া ট্রাজেডি তার জলন্ত সাক্ষী। এ দুই ঘটনায় সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের মোকাবেলা করতে গিয়ে ৪ জন পুলিশ সদস্য জীবন দিয়েছেন।

প্রিয় ছাত্রছাত্রী, অভিভাবকবৃন্দ ও এলাকাবাসী,
আমাদের মাথাপিছু আয় এবং মোট জিডিপির ক্রমাগত প্রবৃদ্ধি ২০২১ সালে আমাদের ৫০তম স্বাধীনতা বার্ষিকী উদযাপনকালে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করবে। দুষ্টুচক্রের অব্যাহত কুকর্ম ও উস্কানি, রাজনৈতিক অস্থিরতার অপচেষ্টা সত্ত্বেও সামাজিক প্রায় সব সূচকে (নারীশিক্ষা, শিশুমৃত্যুহার, জন্মহার, গড়আয়ু, অপুষ্টি, বাল্যবিবাহ) বাংলাদেশ ভারতকে ছাপিয়ে যেতে পেরেছে। বাংলাদেশ ও তার জনগণ নিজের শক্তি দিয়ে তা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের দৃষ্টিতেও এই শুভ লক্ষণগুলো দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। আমরা চাইনা এত অর্জনের সুন্দর দেশ ও আমাদের শান্তিপ্রিয় মানুষ জঙ্গি বা সন্ত্রাসীর কাছে জিম্মি হয়ে থাকুক। সময় এসেছে সজাগ হওয়ার।

প্রিয় ছাত্রছাত্রী, অভিভাবকবৃন্দ ও এলাকাবাসী,
জাতিসংঘের পরিবেশ–বিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মান “চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ” গ্রহণের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “এই পুরস্কার বাংলাদেশের জনগণের অজেয় মনোভাব ও ঘুরে দাঁড়ানোর স্বীকৃতি”। সারা পৃথিবী জানে, বাংলাদেশ প্রায়ই নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়। হাজারো প্রতিকূলতার জন্য বেঁচে থাকাই যখন জিন্দাবাদ, তখন তো আমরা ক্ষণকালের জন্য হলেও অবাক করা খুশি হতে পারি। ১৯৭১ সালে আমাদের ভূখণ্ডের মানুষের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ছিল ৩৯ আর ভারতের ছিল ৫০ বছর। আর এখন ভারতে ৬৬ বছর, বাংলাদেশে ৬৯ বছর। এসব উন্নয়ন যারা সহ্য করতে পারেনা, এমন উন্নয়নের জন্য যাদের গাত্রদাহ হয়, আর যাই হোক তারা তো দেশকে ভালবাসেনা। তাই সময় এসেছে এদের বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলার, এদের থেকে সতর্ক থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে তথ্য দেয়ার।

প্রিয় মুসলমান ভাইবোনেরা একটু খেয়াল করুন,
ধর্মীয় চরমপন্থা (Religious Extremism) বা জঙ্গীবাদ ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ (Completely Prohibited)। প্রকৃত মুসলমান কখনো সন্ত্রাসী হতে পারেনা। চরম পন্থা অবলম্বন ইসলামী ঈমান-আকিদা-বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনার সম্পূর্ন বিরোধী।

নবী করিম (সা:) বলেছেন, “তোমরা সরল পন্থা অবলম্বন করো, চরম পন্থা বর্জন করো, সুসংবাদ দাও এবং ঘৃণা করো না”(বুখারী)।

“প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি যার কথাবার্তা(জবান) ও কার্যকলাপের অনিষ্ট থেকে মুসলমানরা নিরাপদ থাকে”(আবু দাঊদ)।

“ধর্মে জোর জবরদস্তি নেই। সত্য পথ ভ্রান্ত পথ থেকে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে”(সুরা বাকারা:২৫৬)
শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থানের যে বিরল দৃষ্টান্ত প্রথম স্থাপিত হয়েছিল তার দলীল “মদিনা সনদ”। নবী (সাঃ) মদিনায় স্থায়ীভাবে বসবাসকারী তিন শ্রেণী বা ধর্মের লোকের সাথে ইতিহাসের বিখ্যাত শান্তিচুক্তি সম্পাদন করেছিলেন।

প্রিয় অভিভাবকবৃন্দ,
“জঙ্গি দমনে যে প্রশ্নের উত্তর আপনারা খুজেঁ ফিরছেন আমিও আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে অনেক আগে থেকেই Students’/Guardians’ Awareness Program (সামাজিক ও পারিবারিক সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম) এর মাধ্যমেই খোঁজার চেষ্টা করছি।

আজ অতি অসুস্থ/অলস ব্যস্ত (Idle busy) ও মূল্যবোধহীন দায়িত্বের কারণে অভিভাবকরা বাচ্চাদের খোঁজ খবর নিতে ও সময় দিতে পারছেন না। তাই অভিভাবকরা নীচের প্রশ্নগুলোর সদুত্তর সন্তানদের নিকট থেকে নিতেও ব্যর্থ হচ্ছেন।

*আপনার সন্তান কোথায় যায় ?
*কাদের সাথে চলাফেরা করে ?
*লেখাপড়া বা বিশেষ কোন কোর্স করার নামে বাইরে থাকে কিনা ?
*নিয়মিত স্কুল/কলেজে যায় কিনা ?
*রাত জেগে ফোনে কথা বলে কিনা ?
*টাকা পয়সার জন্য মা-বাবাকে চাপ দেয় কিনা ?
*কাজে আগ্রহ আছে কিনা বা কাজ এড়িয়ে যায় কিনা?
*পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতায় অনিহা দেখায় কিনা
*পরিবারের সদস্যদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা
*পোষাক/ফ্যাশনে পরিবর্তন
এ সব নেগেটিভ পরিবর্তন সন্তানের মাঝে দেখলেই বুঝতে হবে আপনার সন্তান কোন দেশদ্রোহী বা অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছে।

প্রিয় ছাত্রছাত্রী, শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাবাসী,
এখন পর্যন্ত গুলশানের জিম্মি ঘটনায় যে কজন সন্ত্রাসী বা জঙ্গি নিহত হয়েছে তাদের অন্যতমরা অভিজাত পরিবারের সন্তান ও দুই একজন মূল ধারার রাজনীতিবিদেরও সন্তান বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়। আদর্শ পরিবারের সন্তানদের এ রকম অনাদর্শে উদ্বুদ্ধ হওয়া শুধু ব্যক্তি নয়; এর ছোবল বিষাক্ত করছে সমাজ ও রাষ্ট্রকে। দেশকে হেয় করেছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে।

জঙ্গি ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে করণীয় ও পরামর্শঃ
১) সকলের সমন্বিত ও সামাজিক সচেতনতা ( Social Awareness) সামাজিক মূল্যবোধ তৈরী করবে ও অভিভাবকদের দায়িত্বশীলতা বাড়াবে। অভিভাবকদের এ বিষয়ে অনন্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।
২) যুবসমাজকে খেলাধুলা ও সৃষ্টিশীল কাজের সুযোগ করে দিতে হবে, সচেতনতা বাড়াতে হবে।
৩) ব্যাধি ঠেকাতে প্রথম প্রতিরোধ পরিবার থেকেই আসতে হবে।
৪) সন্তানের বন্ধু বা পারিপার্শ্বিকতা মা হিসেবে আমলে নিতে হবে। কারণ মা সন্তানের পরিবর্তন আগেই বুঝতে পারে।
৫) একজন মা হিসেবে আপনিই হচ্ছেন তার জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। উপরে উল্লেখিত যে কোনো নেগেটিভ পরিবর্তন সন্তানের মাঝে দেখলেই সন্তানকে বুকে টেনে নিয়ে বুঝাতে হবে।
৬) পারিবারিক বন্ধন ও শিক্ষা, ধর্মীয় অনুশাসন, সৎ উপার্জন ইত্যাদি পারে এ ব্যাধি থেকে বাঁচাতে।
৭) সরকারি উদ্যোগে (উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক) Awareness Program শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক বাড়াতে হবে।
জঙ্গি ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে নিচের বিষয়গুলি পরিহার করুন।
১) সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিশ্ব শান্তি ও প্রবৃদ্ধির প্রধান অন্তরায়, তাই এই কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করবেন না।
২) জঙ্গিকর্মকাণ্ডে অর্থ দিয়ে সাহায্য করবেন না। জঙ্গীদের সহায়তা করবেন না বা সহযোগী হবেন না।
৩) অন্ধবিশ্বাসে আত্মঘাতী জঙ্গি (সুইসাইড বোম্বার) সাজবেন না, জঙ্গি অর্থায়নে কোরবানি করা বা সহায়তা নিবেন না, ছোটো অবোধ শিশুদের হাতে জিহাদী বা জঙ্গির বই তুলে দিবেন না।

পরিশেষে,
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৩-১৪ বছরের অভাগাদের সহজে কারও সঙ্গে মিশতে না পারার যে দুর্দশার কথা বলেছেন, সেদিন আর নেই। শহরে কিংবা গ্রামে আজকালকার কিশোর ও অল্পবয়সী তরুণদের মধ্যে বেশির ভাগেরই বয়ঃসন্ধিকালের সেই দ্বিধা বা জড়তা নেই। এখন ঘরে বসেই একটি সদ্য-গোঁফ-ওঠা তরুণ নিজের মতো আলাদা ভুবন গড়ে নিতে পারে; আধুনিক প্রযুক্তি তার জন্য বিশাল দরজা খুলে রেখেছে। কাজেই এই ভুবনে দূর্বল পারিবারিক বন্ধনের কারণে বাবা-মা ও সন্তানের মাঝে তৃতীয়পক্ষ (জঙ্গিভাবাদর্শ) এর আগমন না ঘটে তাই গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। তাই জঙ্গি দমনে প্রশ্নের উত্তর অভিভাবকরাই দিতে পারবেন সন্তানকে সময় দিয়ে পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ করে এ আমার SGAP এর বিশ্বাস। আর জঙ্গি সংক্রান্তে সন্দেহজনক কোন কর্মকাণ্ড দৃষ্টিগোচর হলে গোপনে নিকটস্থ পুলিশ কে খবর দিন। ধন্যবাদ।

পাঠকের মতামত

আমাদের নিয়ত সহিহ, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার হলেই নির্বাচন: সিইসি

অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন নতুন নির্বাচন কমিশনার ...

নির্বাচন কমিশন গঠন, নতুন সিইসি কক্সবাজারের সন্তান সাবেক সচিব নাসির উদ্দীন

কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার সন্তান অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ ...